সৈন্য সরিয়ে নিলো সরকার, আলেপ্পোর ‘বড় অংশ’ বিদ্রোহীদের দখলে
সিরিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো থেকে সরকারি বাহিনী সরিয়ে নিয়েছে সরকার। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদবিরোধী বিদ্রোহীরা আরও অগ্রসর হওয়ায় সরকার সৈন্য সরিয়ে নেয়।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানায় সিরিয়ার বিদ্রোহীরা আলেপ্পো শহরের কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সবশেষ দেশটির সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে যে বিদ্রোহীরা শহরের ‘বড় অংশে’ ঢুকে পড়েছে। তবে তারা পাল্টা হামলার চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সূত্র: বিবিসি।
বুধবার লড়াই শুরুর পর থেকে অন্তত ২০ জন বেসামরিক নাগরিকসহ অন্তত তিনশ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক এসওএইচআর।
২০১৬ সালে বিদ্রোহীদের ওই শহর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারি বাহিনী। এরপর থেকে গৃহযুদ্ধে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটিই বিদ্রোহীদের বড় লড়াই।
শনিবার প্রেসিডেন্ট আসাদ ‘সব সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের মোকাবেলা করে সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ও ভূখণ্ডগত সংহতি রক্ষার অঙ্গীকার করেন। ‘সন্ত্রাসীদের আক্রমণ যতই জোরালো হোক না কেন আমাদের সহযোগী ও বন্ধুদের সহায়তায় তাদের পরাজিত ও নিশ্চিহ্ন করা কোন ব্যাপারই নয়। সেই সক্ষমতা আমাদের দেশের আছে।’ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় তাকে উদ্ধৃত করে এ মন্তব্য করেছে।
২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ মারা গেছেন। পরে আসাদ সরকার গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভ দমনে ব্যাপক অভিযান শুরু করলে গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়। তবে ২০২০ সালের যুদ্ধবিরতির পর থেকে সংঘাত প্রায় বন্ধই ছিল। যদিও বিরোধী বাহিনীগুলো দেশটির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিব শহর এবং ওই প্রদেশের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল।
আলেপ্পো শহর থেকে ইদলিবের দূরত্ব প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। ২০১৬ সালে সরকারি বাহিনীর হাতে পতনের আগ পর্যন্ত এটি ছিল বিদ্রোহীদের একটি শক্ত ঘাঁটি।
এবার জিহাদি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামস (এইচটিএস) এবং এর কয়েকটি সহযোগী গ্রুপ আলেপ্পো আক্রমণে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এটি তুরস্ক সমর্থিত একটি গোষ্ঠী। এইটিএসকে আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নেওয়া সবচেয়ে কার্যকরী বলে মনে করা হয়। তারা এর মধ্যেই ইদলিব নিয়ন্ত্রণ করছে।
এসওএইচআর জানিয়েছে, বিদ্রোহীরা এর মধ্যেই আলেপ্পো বিমানবন্দর ও আশপাশের এক ডজনের বেশি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে। তারা একইসঙ্গে ওই এলাকায় কারফিউ জারি করেছে যা রোববার পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
সিরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, বিদ্রোহীরা আলেপ্পো এবং ইদলিবের কয়েকটি জায়গায় বড় ধরনের হামলা করেছে এবং প্রায় ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকাজুড়ে লড়াই চলছে। লড়াইয়ে কয়েক ডজন সেনা নিহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে সামরিক বাহিনী।
এদিকে রাশিয়ার বিমান বাহিনী শনিবার আলেপ্পোতে বিমান হামলা চালিয়েছে। গৃহযুদ্ধ যখন চরমে উঠেছিল, তখনো আসাদ সরকারকে ক্ষমতায় রাখার ক্ষেত্রে রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৬ সালে সরকারি বাহিনী আলেপ্পো পুনর্দখল করে নিয়েছিল। এরপর থেকে এবারের হামলাই শহরকে ঘিরে প্রথম ঘটনা।
ওই এলাকা থেকে পাওয়া ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে আলেপ্পো থেকে বের হওয়ার সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। কারণ, লোকজন প্রাণ বাঁচাতে ওই সড়ক দিয়েই শহর ছেড়ে যাচ্ছে।
এমআর
December 2024
ফোন : ০১৫৪০৫০৩৬৩৪
ই-মেইল: [email protected]