ফোন : ০১৫৪০৫০৩৬৩৪
ই-মেইল: [email protected]
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে দণ্ডিত দুই আসামি সানাউল্লাহ এবং রহিম মিয়া ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পরও উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে মুক্তি পেয়েছেন। ১২ নভেম্বর কারাগারের জেলার আব্দুল্লাহিল আল আমিন তাদের মুক্তি দেন, যা নিয়ে কারাভ্যন্তরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তির পরপরই তারা গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে যান। ঘটনার ২০ দিন পরও তাদের গ্রেফতার করতে না পারায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপরতা চালালেও এখনও তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এদিকে, এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং জেলারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপক্ষের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সানাউল্লাহ (লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মনা ব্যাপারীর ছেলে) এবং রহিম মিয়া (নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলার আব্দুল গনির ছেলে)কে ছেড়ে দেন কুমিল্লা কারাগারের জেলার আব্দুল্লাহিল আল আমিন। মুক্তি পাওয়ার পরেই ওই দুই আসামি আত্মগোপনে চলে যান।
দুই আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় কারাভ্যন্তরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কাগজপত্র অসম্পূর্ণ থাকার পরও ওই দুই আসামিকে কেন ছেড়ে দেওয়া হলো, এ নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। একাধিক সূত্রের দাবি, আলোচিত ওই দুই আসামিকে মুক্ত করার পেছনে বড় ধরনের লেনদেন হতে পারে। এদিকে, দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে পুনরায় গ্রেফতার করতে লক্ষ্মীপুরের আদালত থেকে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই দুই আসামির ছবি সংগ্রহ করেছে এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তাদের তথ্য সংগ্রহ করে তৎপরতা চালাচ্ছে।
এদিকে, ওই ঘটনায় কুমিল্লা কারাগারের জেলার আব্দুল্লাহিল আল আমিনের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে কারা অধিদফতর। কারা সূত্রের দাবি, এ ঘটনায় জেলার আব্দুল্লাহিল আল আমিনকে বিভাগীয় ব্যবস্থার আওতায় আনা হতে পারে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫ সালে গণধর্ষণের একটি মামলায় লক্ষ্মীপুর জেলা আদালতে সানাউল্লাহ, রহিম মিয়া সহ চার আসামিকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর সানাউল্লাহ ও রহিম মিয়াকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়, আর বাকি দুই আসামিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। এর মধ্যে, আসামিপক্ষ লক্ষ্মীপুরের সংশ্লিষ্ট আদালতে খালাস চেয়ে আপিল করে এবং চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।
বিষয়টি বিধি অনুযায়ী শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। কিন্তু ওই স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে কুমিল্লা কারাগারের জেলার সানাউল্লাহ ও রহিম মিয়াকে দ্রুত মুক্তি দেন। অন্যদিকে, কুমিল্লা কারাগার থেকে দুই আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার সময় যথাযথ আইন অনুসরণ করে মামলার অন্য দুই আসামিকে কাশিমপুর কারাগারে আটকিয়ে রাখে কর্তৃপক্ষ।
কুমিল্লা কারাগারের একটি সূত্র জানায়, দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলার খুব তৎপর ছিলেন। ওইদিন জেল সুপার ছুটিতে থাকায় জেলার সব দায়দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেন। কী কারণে তিনি এত তাড়াহুড়া করেছেন, এ নিয়ে কারাগারের অভ্যন্তরেই ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে যেন কোনো ধরনের জটিলতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য জেলার ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার আব্দুল্লাহিল আল আমিন বলেন, লক্ষ্মীপুরের সংশ্লিষ্ট আদালতের নির্দেশে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের স্থগিতাদেশের বিষয়টি তার জানা ছিল না। তিনি জানান, পুনরায় আসামিদের গ্রেফতার করতে আদালত পরোয়ানা জারি করেছে। তাই তাদের গ্রেফতারে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন তিনি। ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান বলেন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে খালাস দেওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। এক্ষেত্রে কারও গাফিলতি থাকলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া দুই আসামির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট জেলার আদালত থেকে পুনরায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
undefined/news/country/199887