ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করলেন যুবক
বরগুনার আমতলীতে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফারিয়া জান্নাতি মীম, শ্বশুর ফারুক গাজী, শাশুড়ি খাদিজা বেগম ও চাচা শ্বশুর মঞ্জু গাজীসহ ১০ জনকে মৃত্যুর জন্য দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নিয়াজ মোর্শ্বেদ তনয় নামের এক যুবক। এরপর হাসপাতালে নিলে একদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এতে এলাকার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছয় বছরে দাম্পত্য জীবনের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখে ব্যবসায়ী নিয়াজ মোর্শ্বেদ তনয় গতকাল শুক্রবার সকালে বিষপান করেছেন। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে উন্নতি না হলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যায় যুবক। তার দাম্পত্য জীবনের সুদীর্ঘ লেখা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। জেলাসহ বিভাগীয় পর্যায়ে আলোচনা ও সমালোচনার ঝর বয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলহাজ্ব নান্নু মোল্লার ছেলে নিয়াজ মোর্শ্বেদ তনয়ের সঙ্গে আরেক ব্যবসায়ী চাওড়া চলাভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ফারুক গাজীর মেয়ে ফারিয়া জান্নাতি মীমের বিয়ে হয়। বিয়ের ছয় মাস যেতে না যেতেই স্ত্রী মীমের প্রেমিক আমতলী পৌর শহরের লোচা গ্রামের বাসিন্দা মাছ ব্যবসায়ী বারেক প্যাদার ছেলে রাকিবের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ ছবি স্বামী তনয়ের হাতে ধরা পড়ে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়। পরে প্রেমিক রাকিব তনয়কে জানায় তার স্ত্রী মীমের সঙ্গে তার আগে বিয়ে হয়েছে। দ্বন্দ্ব আরও চরম আকার ধারণ করে। এর মধ্যে ওই দম্পতির ঘরে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম নেয়। স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও স্ত্রী মীমকে সুপথে আনতে পারেনি বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবী করেন তনয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তনয় লিখে গেলেন তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী ফারিয়া জান্নাতি মীম রাকিব, বাহাদুর, প্রিন্স রাজসহ একাধিক ছেলের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পরেছেন। এসব ঘটনা মেনে নিতে না পেরে তনয় মীমকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর তালাক দেয়। তালাক নোটিশ পেয়ে ১৭ অক্টোবর মীম তার নিয়াজ মোর্শ্বেদ তনয়ের বিরুদ্ধে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে নির্যাতন ও যৌতুক মামলা দায়ের করেন। ওই দিনই পুলিশ তনয়কে গ্রেফতার করেন। তনয়ের বাবা নান্নু মোল্লার অভিযোগ আমতলী থানার ওসি আরিফুল ইসলাম আরিফ মামলার নথি না পেয়েই তার ছেলেকে গ্রেফতার করেছে। এ মামলায় তনয় ৬ দিন জেল হাজতে ছিল।
এছাড়া তনয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ওসির সামনেই মীমের আত্মীয় প্রিন্স, জসিমসহ কয়েকজন তাকে মারধর করছে। কিন্তু ওসি তাদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। স্ত্রীর এমন পরকীয়া ও নির্যাতন সইতে না পেরে গত শুক্রবার ভোররাতে তনয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও তার স্বজনদের নির্যাতনের বর্ণনা স্ট্যাটাস দিয়ে বিষপান করেন। মুহূর্তের মধ্যে তার স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে শুক্রবার সকালে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মনিরুজ্জামান খাঁন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা শহীদ সোহরাওয়াদী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে ওই হাসপাতালে তনয় মৃত্যুবরণ করেন। এরপর সন্ধ্যায় মরদেহের ময়না তদন্ত করা হয়।
এদিকে, তনয়ের মৃত্যুর খবরে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী মীম, তার বাবা ফারুক গাজী ও তাদের স্বজনরা গা-ঢাকা দিয়েছেন।
নিয়াজ মোর্শ্বেদ তনয়ের বাবা আলহাজ্ব নান্নু মোল্লা বলেন, আমার ছেলে যাদের নাম উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দিয়েছে তারা এবং তাদের স্বজনরা মানসিক নির্যাতন করে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। মীম আমার পুত্রবধূ থাকা অবস্থায় একাধিক পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়লে আমার ছেলে তাকে তালাক দেয়। ওই তালাকের রেশ ধরে আমার ছেলের বিরুদ্ধে বরগুনা নারী শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলার নথি না পেয়েই আমতলীর ওসি তনয়কে গ্রেফতার করেছে। আমার ছেলের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত সবার বিচার দাবি করছি।
তবে এ ব্যাপারে জান্নাতি মীম ও তার বাবা ফারুক গাজীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, ব্যবসায়ী যুবক তনয়ের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনা শুনেছি। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নথি ছাড়া গ্রেফতারের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আদালতের আদেশ পেয়েই তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
December 2024
ফোন : ০১৫৪০৫০৩৬৩৪
ই-মেইল: [email protected]