ইসলামের স্বার্থে আমাদের এক থাকতে হবে: প্রফেসর ড. মো. সামছুল আলম
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডক্টর মো. সামছুল আলম বলেছেন, ইসলামের স্বার্থে আমাদের এক থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জাতীয় স্বার্থে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের মধ্যে মাসলাকের যত পার্থক্য থাকুক না কেন দিন শেষে আমাদেরকে জাতির স্বার্থে এক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো প্রকার শৈথিল্য প্রদর্শন করলে চলবে না। মাদরাসা শিক্ষকরা যথাযথ ভূমিকা রাখলেই এই দেশটিকে ইসলামের আলোকে গঠন করা যাবে।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) পিরোজপুর আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আজ সকালে টগড়া কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহিল মাহমুদের সভাপতিত্বে ফাজিল ও কামিল মাদরাসা অধ্যক্ষদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ড. মো. সামছুল আলম শিক্ষকদের দক্ষতা যোগ্যতার বিষয়ে বলেন, সব শিক্ষককে ছাত্র-ছাত্রীরা সমানভাবে মেনে নেয় না। কোনো কোনো শিক্ষকের ক্লাশ করার জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা অনেক দূর থেকে ছুটে আসে। আবার অনেক শিক্ষকের ক্লাসে ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত থাকে না। ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসা অর্জন অনেক বড় ব্যাপার, এটা অনেক বড় এক সম্মানের ব্যাপার।
তিনি বলেন, শাসন দিয়ে যে কাজ না হয় মমতা দিয়ে তার চেয়ে বেশি কাজ হয়। আপনারা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মমতা দিয়ে, ভালবাসা দিয়ে আগামী দিনের সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন।
তিনি ৫ আগস্টের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বলেন, আমরা বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু আন্দোলন পরবর্তী আমাদের চিন্তা বদলে গিয়েছে। এই ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়েই যে দেশ গড়া যাবে সেই ব্যাপারে আমারা আশাবাদী হয়ে উঠেছি।
তিনি বলেন, এবারের আন্দোলনের বেশির ভাগ ছাত্র-ছাত্রীরা নামাজি ছিল, এটি একটি বিশেষ দিক।
তিনি আরও বলেন, মাদরাসা শিক্ষায় অনেক অনেক অনিয়ম দুর্নীতি আছে। আমরা এগুলো দূর করতে একটি টিম হয়ে কাজ করছি।
ভিসি বলেন, পৃথিবীতে যেসব দেশের শিক্ষায় বাজেট কম তার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। আমাদের শিক্ষায় সবচেয়ে কম বাজেট।
তিনি বলেন, চাকরিবাকরি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিগত সরকার মাদরাসার ছাত্রদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেনি, অপমান অপদস্থ করেছে। আমরা এসব সমস্যাগুলো দূর করার জন্য কাজ করছি।
প্রফেসর ড. মো. সামছুল আলম বলেন, ব্রিটিশরা এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা এ দেশে রেখে গিয়েছে যে, একই পরিবারের দুই সন্তান দুই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়ালেখা করলে তারা দুই ধরনের মন মানসিকতা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বড় হয়।
তিনি বলেন, আমাদের ভেতরে অনেক বিষয়ে অনেক মতপার্থক্য থাকতে পারে। মাসলাকের পার্থক্য থাকতে পারে কিন্তু দিন শেষে আমরা সবাই মুসলমান। ইসলামের স্বার্থে আমাদের এক থাকতে হবে। বিভক্তির কোনো সুযোগ নেই।
তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করে বলেন, আমরা কোনো দুর্নীতি করব না। আমরা শুধু চাকরি করি না। আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করি। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন, আমরা যেন দেশ এবং জাতির জন্য ভালো কাজ করে যেতে পারি।
তিনি বলেন, অনেক জঞ্জাল সৃষ্টি হয়েছে, আমরা ধাপে ধাপে আস্তে আস্তে সব সমস্যার সমাধান করব ইনশাল্লাহ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু জাফর খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মাহমুদ বিন সাঈদ, প্রফেসর জিয়াউর রহমান, আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসাইন ফরিদ। এছাড়াও বিভিন্ন ফাজিল ও কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষদের মধ্যে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, মাওলানা আব্দুর রহিম, মাওলানা মুহাম্মদ ফরিদ আহমেদ, মাওলানা মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, মাওলানা ওমর ফারুক।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব মাওলানা শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু জাফর খান বলেন, এটি আমাদের তৃতীয় মতবিনিময় সভা। ইতোপূর্বে আমরা আরও দুটি মতবিনিময় সভা করেছি। বেশি মহোদয় বিভিন্ন মাদরাসা ও মাদরাসা শিক্ষকদের সুবিধা ও অসুবিধা শোনার জন্য আপনাদের কাছে চলে এসেছেন। তিনি আপনাদের সমস্যা শুনে দ্রুত কিভাবে সমাধান করবেন তার জন্য কাজ করতে চান। তিনি বিগত দিনে মাদরাসা শিক্ষকদের বিতর্কিত ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আপনাদের পরিবর্তনের সময় হয়েছে। তিনি আল্লামা সাঈদীর মতো নিঃস্বার্থভাবে দ্বীনের জন্য অকুতোভয় সাহসী সৈনিক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এই মাদরাসা শিক্ষা দিয়েই হতে পারে আগামী বাংলাদেশ গড়ার শিক্ষা ব্যবস্থা। কোনো দলাদলি, কোনো অভিযোগ শুনতে চাই না। পিরোজপুরকে মাদরাসার শিক্ষায় মডেল জেলায় পরিণত করতে হবে।
প্রফেসর মাহমুদ বিন সাঈদ বলেন, শিক্ষকরা বেতন ভাতা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করার আবেদন জানান। মাদরাসায় ছাত্র ভর্তি হয় না সেই অভিযোগ করেন, কিন্তু শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ভালো শিক্ষা দেওয়ার জন্য গবেষণামূলক শিক্ষা দান করেন না। শিক্ষকদের এমনভাবে শিক্ষা দিতে হবে যেন ছাত্ররা গবেষক হয়ে গড়ে ওঠে, তাহলেই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র পাবেন।
অনুষ্ঠানে আগত বিভিন্ন মাদরাসার অধ্যক্ষরা মাদরাসা শিক্ষার বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন। তারা পিরোজপুর সদরের একটি কামিল মাদরাসা, ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষার পরে দ্রুত সার্টিফিকেট প্রাপ্তি, চাকরি ক্ষেত্রে মাদরাসার ছাত্রদের যাতে বৈষম্য শিকার হতে না হয় সেগুলো দূরীকরণ, খাতা দেখার পরে দুই বছর পরে সম্মানি পাওয়ার ভোগান্তি, অধ্যক্ষকে প্রতিষ্ঠার পরিচালনায় নিয়োগসহ বিভিন্ন কাজে সভাপতির দুর্নীতি মুখ বুঝে সহ্য করতে হয় এসব সমস্যা দূর করার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
প্রফেসর ড. মো. সামছুল আলম মহোদয় শিক্ষকদের সব অভিযোগ অধ্যক্ষদের বক্তব্য ধৈর্য সহকারে মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং সমাধানের আশ্বাস দেন।
December 2024
ফোন : ০১৫৪০৫০৩৬৩৪
ই-মেইল: [email protected]